Description
হরের নাম সকা। ‘ত্রিশের দশকের উধ্যলছে আমার বয়স দুই কিংবা তিন। শৈশব এপিতে চলে সেই শহরে, গোল্লাছুট আর কানামাছির অনল শৈশব। তারপর একদিন আর্জেনিটোলা স্কুল। শেশব থেকে কৈশোর। স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ অধ্যায়। সাঙ্গা। মন্বন্তর। দেশভাগ। এদিকে আমরা স্কুলের উঁচুক্লাসে ওঠবার সঙ্গে সঙ্গে সোভিয়েত বিপ্লাবের কথা শুনতে শুরু করেছি। এইভাবেই প্যারার পাতায় পর্ব থেকে পর্য্যন্তরে উম্মোচিত হয় এক বহুমাত্রিক মানুষের বর্ণময় জীবনের কাহিনি। আপিলা চাপিলা এই মানুষটির এলোমেলো ইতস্তত বিচ্ছিন্ন জীবনচর্যার উপাখ্যান। নিজেকে ঘোর অপছন্দ করেন, নিজের গোটা জীবনটাকেও, কিন্তু সেই কবুলতি থেকে নিজেকে তিনি বঞ্চিত করেননি। সেই শৈশবে শুনেছিলেন একটি গ্রানা ছড়া ‘আপিলা-চাপিলা ঘন ঘন কাশি, রামের এঁকো শ্যামের বাঁশি।’ সেই ছড়াটিই অবচেতনার স্বর থেকে বেরিয়ে এসে লেখকের চেতনায়, সত্তায় যেন মিশে গেছে। ‘এখন মনে হয় গোটা জীবনটাই ছড়াটির মতো। যতগুলি পর্ব পেরিয়ে এসেছি, বেশির ভাগই ঝাপসা কুয়াশায় আবৃত, কোনও-কোনও মানুষজন ঘটনার কথা মনে পড়ে। অনেক কিছু পড়ে না।’ এই স্মৃতিকথা ব্যক্তিকেন্দ্রিক আত্মকথন নয়, আবার নিছক একটি বিশেষকালের বিশ্লেষণ সম্পৃক রাজনৈতিক বৃত্তান্তও নয়। দেশ, কাল, সমাজ, একাকী ও যুথবদ্ধ মানুষ, বিত্তশালী মধ্যবিত্ত-বিত্তহীন মানুষ, সমসময়ের কাব্য-সাহিত্য-রাজনীতি-অর্থনীতি- ইতিহাস- সব মিলিয়ে এক বিরাট প্রেক্ষাপটে বিধৃত আত্মকাহিনি। আবার আত্মকথা হয়েও ‘আপিলা-চাপিলা’ বহু মানুষের জীবনকথা। এই মানুষ পথিক মানুষ, পদাতিক মানুষ, কবিতা থেকে মিছিলের অসংখ্য সাধারণ মানুষ। যাঁরা সহস্র প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যুগ যুগ ধরে ইতিহাস লিখে চলেছেন। আত্মকথার সীমাবদ্ধতা ছাপিয়ে ‘আপিলা-চাপিলা’ এক ব্যাপ্ত সময়ের কণ্ঠস্বর। লেখকের মানসিকতা আপাতবিচারে বিষন্ন নাস্তিকতায় সমাচ্ছন্ন, তা হলেও হয়তো এই বৃত্তান্তের মধ্যেই একটি বিশেষ জীবন-দর্শন নিজেকে প্রকাশ করতে চেয়েছে। ‘দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশের সময় ‘আপিলা-চাপিলা’ পাঠকমহলে তুমুল আলোড়ন তুলেছে যেমন, তেমনই আবার সত্যভাষণের উজ্জ্বল স্বাতন্ত্র্যে এবং হারানো দিন আর হারানো মানবজনের
স্মৃতি উসকে দেওয়ার মরমি মানবিকতায় বহুজনের
কাছে সমাদৃত হয়েছে। সেই শাণিত তর্কমুখর, অকপট
আত্মকথন এবার গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হল।
Reviews
Clear filtersThere are no reviews yet.