ছেলেটির নাম ফুসমন্তর শুনে মেঘবালিকা তো সেই রেগেই আগুন। গল্প-টল্প শোনা সব বাতিল হল তখনই। ছেলেটি অবিশ্যি বলেছিল, নতুন করে লিখবে সব। আর ঠিক তখনই তো আজীবনের বৃষ্টি এল। এক পৃথিবী লিখবে বলে সেদিন অপ্রস্তুত যে যুবক বুঝেছিল একটি খাতাও শেষ করেনি, সেও কি গোপনে কয়েকটা পাতা অন্তত লিখে ফেলতে পেরেছিল? যদি লিখতে পারত তবে কেমন হত? কেমন হত আজ মেঘবালিকার সঙ্গে গল্পগুজবের মুহূর্তগুলো? সেদিনের সেই ছোটবেলার খেলার মাঠ আজ নিশ্চিতই ভরে উঠত অন্য নাগরিকতার অনুষঙ্গে। হয়তো বদলে যেট আলাপনের ভাষা, মুহূর্ত-বিনিময়ের ভঙ্গিগুলোও। আজ তাই কান পেতে শুনি, এক যুবক বলছে,
আসবি যদি ভেজা চুলের জলে,
দুপুরবেলা জয়ের লেখা পড়ি?
বাকি জীবন তোর দু-মুঠোর ভিতর
একসাথে আয়, অশান্তি ভোগ করি।
আমরা, পাঠকরা যেন অনুভব করি, এখান থেকেই শুরু ‘ফুসমন্তরের পরেরটুকু’। আর সেটুকু শোনানোর দায়িত্ব নিয়েছেন তরুণ কবি অর্ঘ্যদীপ আচার্য্য। এই বইমেলায় সৃষ্টিসুখ প্রিন্ট থেকে আসছে এই নবীন কবির প্রথম বই। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অর্ঘ্যদীপের লেখার সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। তাঁর উচ্চারণে স্মার্টনেস আছে, তবে সেই সঙ্গে তিনি দক্ষতায় বজায় রাখেন কমনীয়তা। দাউদাউ দহনেও অনুভূতির মৃদু মোমবাতিগুলো জ্বালিয়ে দিতে ভালবাসেন অর্ঘ্যদীপ। আর সেই কাঁপা কাঁপা আলোছায়ার আলপনাতেই তিনি লিখে চলেন তাঁর যাপনের দিনলিপি। লেখেন এই সময়ের ভাষায়। এই সময়ের প্রকাশভঙ্গিতে। ফলে নতুন সময়ের কবিতা কোন পথে চলেছে বা চলতে চাইছে, শ্রীজাত-বিনায়কদের উত্তরাধিকার তাঁদের পরবর্তী সময়ের কবিরা কতখানি কলমে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন, তার দিশা দেখাতে পারে অর্ঘ্যদীপের এই কবিতারা। অন্তত সে পরীক্ষায় যে তিনি স্বেচ্ছায় নেমেছেন তা বলাই যায়। আর নেমেছে বলেই তার আত্মবিশাসও টের পাওয়া যায়। বাকি কথা তো বলবে তাঁর কবিতারাই। আসলে যে কোনও নতুন কবির বই মানেই পাঠকের অচেনাকে চেনার বিস্ময়, অ্যাডভেঞ্চার। সেই চেনার আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েই যেন অর্ঘ্যদীপের পঙক্তিরা ডাক দেয় দেখার রকমফেরে, এভাবেই —
একলা ঘরে ভাবতে বসে দেখি
জীবন অনেক গল্প বলে নিজে,
রোদচশমার বাইরে দিকে আলো
ভিতর থেকে বিষণ্ণতায় ভিজে।
এই আলো-ভেজা দোটানার জীবন, এই সময়ের চাপা কষ্ট, প্রকাশ আর না-প্রকাশের লুকোচুরি কীভাবে স্মার্টলি ছুঁয়ে ফেলতে পারে কবিতার জমি। আসুন অর্ঘ্যদীপের বইয়ের পাতা উলটেই বরং সে উত্তর খুঁজে নেওয়া যাক।
Reviews
Clear filtersThere are no reviews yet.