দেবাশিস দে-র গল্প সংকলন।
শ্মশানের গেটে নাম ধরে ডাকছে। কিন্তু কে উত্তর দেবে?
কিছুক্ষণ আগে যখন হাতে পঞ্চাশ মিনিট সময় ছিল, তখন নদীর পাড়ে ফাঁকা উঁচু জায়গাটায় আমরা বসেছিলাম। ঘাটে আজ অনেক মানুষ। তর্পণ হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে—
বিষ্ণুরোম্ – নিজ গোত্র এবং পিতার নাম বলুন – তৃপ্যস্বৈতত্তে সতিল গঙ্গোদকং স্বধা। জল দান করুন!… পিতামহের নাম… প্রপিতামহের নাম… পরাৎপরপ্রপিতামহের নাম… জল দান করুন।
তাকিয়ে আছি নদীর দিকে। বেশ কিছুক্ষণ পর নদীতে একটা পাল তোলা নৌকা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। চারদিকে ফুল দিয়ে সাজানো। চাঁদোয়া টাঙানো। নৌকায় গান-বাজনা চলছে। কাছে আসতে দেখলাম সম্ভবত মাস দুয়েকের একটি বাচ্চা তার মায়ের কোলে শুয়ে আছে। ধুতি পাঞ্জাবি পরা। সবাই ওই বাচ্চাটিকে নিয়ে আনন্দে মশগুল। আশপাশের লোকেদের কথায় জানতে পারলাম মাঝে মাঝে এরকম সাজানো পাল তোলা নৌকা নদী পথে যায়। বহুবছর পর সন্তান প্রাপ্তি বা কোনও মানত থাকলে পরিবার এইভাবে খরচা করে মা গঙ্গার কাছে সন্তানকে ঘোরাতে নিয়ে আসে। সন্তানটির দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকি। কখন যেন মনে হয় আমিই ওই সন্তান। মা-র কোলে থাকতে থাকতে আস্তে আস্তে আমি বড় হয়ে উঠছি। আধো আধো কথা বলতে চেষ্টা করছি। সবাই আমাকে শেখাচ্ছে আমার নাম কী। বলতে বলছে নাম। কে আমার বাবা, কে আমার মা চেনাচ্ছে। আমার একটা পরিবার তৈরি হচ্ছে। আমি জড়িয়ে পড়ছি একটা সম্পর্কে। এক অদ্ভুত গল্প-জগতে হারিয়ে যাচ্ছি। বুঝতে পারছি নামই আমার একমাত্র পরিচয়। আমি আস্তে আস্তে বড় হচ্ছি, আরও বড়, আরও বড়…
এর মাঝে কখন আমি সবার সঙ্গে শ্মাশান গেটের কাছে এসে দাঁড়িয়েছি।
নাম ধরে ডাকছে।
সম্বিত ফেরে। বলি, আমরাই ওঁর বাড়ির লোক। আমাদের ডাকা হল। হাতে তুলে দেওয়া হল ছাই থেকে বেছে নেওয়া অস্তিত্বের শেষ চিহ্নটুকু। আমরা এগিয়ে যাই গঙ্গার দিকে।
Reviews
Clear filtersThere are no reviews yet.