“অপরাধ নেবেন না দেব, সংগীত কি মানুষের সব দুঃখ হরণ করতে পারে?
হ্যাঁ কন্যা, সংগীতই মানুষের দুঃখহরণ করে শান্তি দিতে পারে। যা আমাদের অন্তরকে রঞ্জিত করে, তাই রাগ। ইহজগতের শোকতাপ, মান-অভিমান, দুঃখকষ্ট প্রশমিত করে একমাত্র সংগীত।”
পিরিয়ড পিস কথাটার কোনও চালু বা স্বীকৃত বাংলা প্রতিশব্দ আছে কিনা আমার জানা নেই, অন্তত আমি আজ অবধি তেমনকিছু কোথাও পাইনি। আজ এ নিয়ে ভাবতে বসে মনে হল, পিরিয়ড পিস কথাটার বাংলা হিসেবে যুগাখ্যান যদি বলি, হয়তো নেহাত মন্দ হবে না।
তা, পিরিয়ড পিস কিংবা যুগাখ্যান যাই বলি না কেন, যে একজোড়া সংলাপ বিনিময়ের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখাটা শুরু করেছি, সেটা ওইরকম এক উপন্যাস থেকেই নেওয়া। উপন্যাসটার নাম ‘রাগ রঞ্জাবতী’, লেখক বিপুল দাস। দ্বাদশ শতাব্দীর শেষভাগের গৌড়বঙ্গ এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট, মানুষের ব্যক্তিক ও সামাজিক নৈতিকতার মান যেসময় তলানিতে এসে ঠেকেছে, যখন—লেখকের নিজেরই ভাষায়—আখ্যানের মুখবন্ধ ‘কিছু কথা’-এ লেখক যেমনটা আমাদের জানাচ্ছেন—”গৌড়বঙ্গের প্রতিটি ঘর নীতিভ্রষ্ট কামলীলার আগার”। এরকমই এক অন্ধকার কালপর্বে স্থাপিত গৌড়বঙ্গের কাল্পনিক দুটি নগরীর পটভূমিতে লেখক গড়ে তুললেন তাঁর অনির্বচনীয় এই আখ্যান, যেখানে নরনারীর প্রেমের উত্তরণের মাধ্যম হয়ে উঠল সংগীত, বিরহের ঐশ্বর্যে সম্পন্ন সেই মিলনে হৃদয়ের নিষেকে জন্ম নিল নতুন এক রাগ, যার নাম রঞ্জাবতী।
এ এক আশ্চর্য আখ্যান। দশ ফর্মার এই পেপারব্যাকটির—যার মধ্যে মূল আখ্যানাংশ সাড়ে নয় ফর্মার—শুরু থেকে শেষ অবধি পড়তে পড়তে ও ক্রমশ চেনাজানা হয়ে উঠতে থাকা অচেনা নরনারীদের অজানা জীবনযাপনের শরিক হয়ে উঠতে উঠতে সারাক্ষণ, অনুক্ষণ, আপনি যেন শুনতে পাবেন স্বর্গসম্ভব বীণায় মৃদু অলৌকিক রাগবিস্তারের আবহসংগীত।
কী অদ্ভুত সুন্দর বুনন উপন্যাসটির! ডাকযোগে এসেছিল বইটি—পরম যত্নে এবং আমার পক্ষে শ্লাঘনীয় দুটি কথা লিখে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন আমাকে বিপুলদা—তাও প্রায় মাসখানেক আগে। হাজারটা কাজের চাপের মধ্যে অল্প অল্প করে, একটু একটু করে পড়ছিলাম। পড়া শেষ করে আক্ষেপ হল, কী ভালোই না হত যদি এক টানে শুরু থেকে শেষ অবধি পড়ে ফেলতে পারতাম!
…
এমন একটি মহতী গ্রন্থ পাঠকের কাছে নিয়ে আসার জন্য প্রকাশক ‘সৃষ্টিসুখ’ কর্তৃপক্ষকে, এই সুযোগে, জানাই আমার আন্তরিক অভিবাদন।
– ঋজুরেখ চক্রবর্তী
Reviews
Clear filtersThere are no reviews yet.