রাত করে বাড়ি ফিরতে বড় ভয় লাগে অনিকার কিন্তু রেস্তোরাঁর চাকরিতে না বলার জায়গা কই! ভাইটা আসে কিন্তু জ্বর বাধিয়েছে তাই আসতে পারেনি। আজকে মোটামুটি ভালই টিপ এসেছে। যত এইগুলো আসে ততই লাভ বাড়তি কিছু জমানো যায়। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে বড় রাস্তা ছেড়ে পাড়ার পথে ঢুকল অনিকা..
খানিকটা এগোতেই বুকটা ধড়াস করে উঠলো অনিকার। বাইক ঠেলতে ঠেলতে এগিয়ে আসছে রথীন আর তার দুই সাগরেদ। তাদের চলন বলে দিচ্ছে নেশা এখন তাদের মাথায়.. রথীন এগিয়ে আসছে। নেশা করা ঘোলাটে চোখে দৃষ্টি বদলে গেছে। ল্যাম্পপোস্টের আলো অথবা বিকৃত ক্ষুধায় ধ্বকধ্বক করছে ..
দৌড়তে চাইছে অনিকা। কিন্তু পা জমে গেছে। আর ঠিক তখনই, “দিদি কোন সমস্যা.. “
চমকে পিছন ফিরল অনিকা৷ অচেনা একটা ছেলে! না পুরুষ… বৃষস্কন্ধ পুরুষ! থমকে দাঁড়িয়ে রইল অনিকা।
“দিদি কোনও সমস্যা? ” ছেলেটি আবার কথা বলল। অনিকা দাঁড়িয়েই রইল। ছেলেটি এগিয়ে গেল সামনের দিকে, এ ভাই তোমাদের সমস্যা কী? বিষয়টা কী হলো বুঝতে পারল না অনিকা। কিন্তু রথীন আর তার দলবল ভীষণ ভয় পেয়েছে। টলমল পায়ে বাইকে স্টার্ট দিয়ে তিনজনে উঠে ভীষণ স্পিড তুলল। ছেলেটা সামনের দিকে এগিয়ে গেল। তার দিকে ফিরেও তাকালো না, কেবল গলা ছেড়ে বলল, ” ও দিদি বাড়ি যান। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবেন না.. “
সম্বিত ফিরে পেল অনিকা। ছেলেটি সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। পিছু পিছু অনিকাও এগিয়ে গেল। তাদের বাড়ির মোড় এর আগে ছেলেটি অন্যদিকে মোড় নিল। অনিকাও মোড় ঘুরে বাড়ি চলে গেল। ধন্যবাদ দেওয়ার ইচ্ছে হলেও, সে লাজুক মেয়ে সেটা আর দিতে পারল না।
***
যতই রাত হোক স্নান সেরে ঠাকুরঘরে দুটি ধূপ দেওয়া অনিকার অভ্যাস। আজকে ধূপটা দিতে গিয়ে চোখ পড়ল পুরাতন রঙচটা কার্তিক ঠাকুরটার উপর। হাতে জ্বলজ্বল করছে এবছরের পরানো রাখিটা। চমকে উঠল সে, এই রাখিটাই সে এক্ষুনি দেখেছে! ওই ছেলেটার হাতে ছিল এইটা… হায় ঈশ্বর!
ধুপের সুগন্ধি ধোঁয়া পাক মেরে উঠে যাচ্ছে উপরে। কেউ যেন তার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, ” মনে আছে দিদি ? যেদিন আমাকে বারান্দায় রেখে গিয়েছিল। মা আর বাবা ফেলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তুমি ছোট ভাই বলে বুকে করে জড়িয়ে ঘরে এনেছিলে। কার্তিক মানে যোদ্ধা দিদির মান সে রক্ষা করতে জানে.. “