ডানদিকের দোতলা বাড়ির নিচে একটা ধোপার দোকান ছিল। তাদের ময়লা কাপড়ের বোঁচকাগুলো রাস্তার ফুটপাতে ফেলে রাখতো কোথায় কোন পুকুরে ধুতে নিয়ে যাবার জন্য। একটা গাধাও ছিল তাদের। রাসভরাগিণী কাকে বলে ভালো করেই শুনতে পেতাম। বোঁচকাগুলো পিঠে করে নিয়ে যেতো গাধা। একদিন সকালবেলা দেখি মস্ত একটা বোঁচকায় বসে আর একটাতে হেলান দিয়ে দিব্যি ফুতপাতের মধ্যেই মনের আনন্দে পা দোলাচ্ছেন শিবরাম। সারা মুখে সুখের ছাপ। বেলা বোধহয় তখন নটা কি দশটা। পাপ্পা (বুদ্ধদেব বসু – প্রতিভা বসুর ছোটছেলে) দৌড়ে গেলো ডাকতে। তখন সে বেশ বড় ছেলে। বললো, ‘এ কি, আপনি কেন এখানে বসে আছেন? চলুন, আমাদের বাড়ি চলুন।’ অনেক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘আমি তোমাকে চিনি না, তোমাদের বাড়ি যাব কেন? ‘ পাপ্পা হেসে বললো, ‘আমাকে না চেনেন আমার বাবা বুদ্ধদেব বসুকে তো চেনেন, এখানে না বসে সেখানেই বসবেন চলুন। ‘
‘অ, তুমি বুদ্ধদেবের ছেলে? এখানে বসে বড় আরাম পাচ্ছি। তুমিও এসো না বসবে একটু। ইচ্ছে করলে তোমার বাবাকেও ডেকে আনতে পারো।’
– জীবনের জলছবি, প্রতিভা বসু
– পঞ্চানন ঘোষালের স্মৃতিচারণ
– শিরোনাম শিবরাম
– কোরক থেকে প্রকাশিত
Lekhay Sibram Rekhay SriSaila Vol. 1 || Shibram Chakraborty
শিবরামকে নিয়ে শোনা গল্প আবার নতুন করে শোনানো লেখক কিন্নর রায়ের কলমে
এরকম গল্পও শুনেছি একজন বেশ সুদর্শনা ও যথেষ্ট সাজগোজ করা মহিলা নাকি হঠাৎই এশিয়া পাবলিশিং-এর সামনে এসে একটু বিহ্বল হয়েই একটা রাস্তা ও সেই রাস্তার সঙ্গে লেগে থাকা বাড়ির ঠিকানা খোঁজ করছিলেন। ‘এশিয়ার’ কর্মচারীদের ভেতর থেকে কেউ কোনো জবাব দেওয়ার আগেই শিব্রাম বলতে শুরু করলেন। এ গল্প যিনি শুনিয়েছিলেন তিনিও আজ বেঁচে নেই। তো সে যাই হোক মহিলা জানতে চাইছেন ঠিকানা। এশিয়া পাবলিশিং-এর কর্মীরা কোনো জবাব দেওয়ার আগেই শিবরামের ওপর পড়া জবাব -
এখান থেকে একদম সোজা চলে যান। তারপর ডান দিকে যাবেন। ডান দিকে গিয়ে বাঁ-দিকে। তারপর সোজা। আবার ডান দিক, তারপর বাঁ-দিক। এবারে ডান দিক বাঁ-দিক করতে করতে যেদিকে খুশি চলে যাবেন।
এই যে ‘যেদিকে খুশি চলে যাবেন’ এটা শোনা পর্যন্ত আর সেই সুসজ্জিতা মহিলা দঁাড়াননি। তিনি হাঁটতে আরম্ভ করেছিলেন।এশিয়া পাবলিশিং-এর সামনে দঁাড়ানো কোনো একজন তাকে জিজ্ঞেস করলেন একী, আপনি ঠিকানা না জেনেই ওঁকে এভাবে রাস্তা বাতলে দিলেন।
শিবরামের নিপাট মুখের জবাব, এত সেজেগুজে বেরিয়েছে। একটু ঘুরুক না। চার্লি চ্যাপলিনকে অনেকেই বলেছেন, ‘বিপজ্জনক শিশু’। এই একই কথা শিবরামের ক্ষেত্রেও বলা যায়।...উনি মেসের যে ঘরে থাকতেন তার সমস্ত দেওয়াল জুড়ে ঠিকানা লেখা। কেন দেওয়ালে এই লেখালেখি জিজ্ঞেস করলে সাদা-সাপটা জবাব পাওয়া যেত খাতা
হারায় ভাই, দেওয়াল হারায় না।
অক্লেশে বাইরে থেকে ঘুরে এসে রাজ্যের ধুলো লাগা পা নিজের বিছানার চাদর তুলে মুছতে মুছতে বলতেন
আমার ঘরে নেইকো পাপোশ
তাও করিনে আপস।
কিন্নর রায়
জানা অজানা শিবরাম, সন্দেশ পত্রিকা