বড় আশ্চর্য ছিল সেই যাত্রা। বড় অজুবা ছিল সেই ফেলে আসা সময় । হ্যাঁ। ফেলে আসা, সময়। সময় যখন ছিল বড় মিষ্টিমিষ্টি আর তাজ্জব-তুলতুলে। সময়, যখন মোবাইল ফোনের আগমন ঘটেনি ধরাধামে। সময়, যখন ক্যামেরায় রিল ভরতে হতো ফটো-দোকানের ডার্করুমে। সময়…যখন আমরা বেড়ে উঠছিলাম একটু একটু, থুতনিতে দাড়ি গজিয়ে উঠছিল আদুরে আনাড়ি আর ওড়না পরশ ভুলক্রমে পেয়ে গেলে খড়ি-ওঠা চামড়ায় কাঁটা-কাঁটা ফুটে উঠতে শিখে গিয়েছিল নির্লজ্জ সজারু। এবং কী আশ্চর্য মাহফিল দেখুন, নেপথ্যে ঠিক সেই সময়েই ফচকে ছোকরা গুনগুন করে পেরিয়ে যেত হিট-গানের কলি– কাঁটা লাগা, আ-আ হায় লা-গা।
সৃষ্টিসুখ প্রকাশিত আশ্চর্য ভ্রমণ নামক সেই বইটির দাস্তান ছিল এমনই সব দিনে ছাপোষা বাঙালি জীবনে আচমকা ঘটে যাওয়া একটা অভিযানের। এমন অভিযান…গুগুল-ম্যাপ অথবা ‘এ.আই’ অধ্যুষিত বিস্ময়রহিত-জগতেও যার টগবগানি তুচ্ছ হবে না এতটুকুও। রিখটার্সভেল্ট পর্বতমালার মতোই দুই দশক পূর্বের সেই সান্দাকফু বারবার ঘেঁটি ধরে বলে যাবে আজও আমাকে– তুমি…তুমি দেখতে পাচ্ছ সব্য?…হ্যাঁ… ওই যে…দ্যাখো… পারছ এবারে?…ওই যে দ্যাখো বাঁকে বাঁকে ছড়িয়ে রয়েছে তোমার যৌবন, গাছে গাছে থোপা থোপা হয়ে ঝুলে রয়েছে তোমার আকাশকুসুম স্বপ্ন আর সমস্তকিছুতে সরের মত কুয়াশা জমে রয়েছে তোমারই অপাপবিদ্ধতার, তোমারই বিস্ময়ের, তোমারই হাঁ করে দেখা এক জোড়া তাজা চোখের। পাচ্ছ…?
তো, সেই যে সে-ই অভিযান-লিপি খতম করেছিলাম সেবারে, ওই আশ্চর্য ভ্রমণ নামক বইটিতে, তা ছিল আদতে অসম্পূর্ণ। অভিযাত্রীর-ডায়েরির পাতা ফুরিয়ে গিয়েছিল আমার। অথবা দুর্গম সে পথে শুকিয়ে গিয়েছিল ‘সুলেখা-কালি’। আর কতকটা মিথ্যা-ভাষণ সমেত হুটপাট করে সে যাত্রা ডায়েরি বন্ধ করে দিয়েছিলাম আমি।
কিন্তু অভিযান তো আর সেখানে থেমে থাকেনি মোটেও। এবং সান্দাকফু সেরেই সটান হোস্টেলে ফিরেও আসিনি আমরা। বরং ডুব দিয়েছিলাম আরেক অতি-সাধারণ যাত্রায়। যে যাত্রাপথে দেখেছিলাম আংরেজি গঞ্জ, চড়েছিলাম লুপ্ত মিটার-গেজ আর খুঁজে পেয়েছিলাম এক আশ্চর্য মানুষকে।
এ বই আদতে তারই দাস্তান। মুখ্যত।
কেন মুখ্যত? কারণ এ কিতাবের দ্বিতীয়ভাগে রয়েছে প্রত্যেক দিশেহারা অভিযাত্রীর বাড়ি ফিরবার সুতীব্র ইচ্ছার ডায়েরি। যেখানে…ফেরা যায় না। কক্ষনো।
Reviews
Clear filtersThere are no reviews yet.