“দেখ বইটার ভাষা আমি মৈথিলী। আমার সেদিনই সন্দেহ হয়েছিলো। কিন্তু আমি শিওর না হয়ে বলতে চাইছিলাম না। আমার স্যার এর সাথে আমি এই বিষয়ে কথা বলেছি। আর বইটা কী নিয়ে লেখা জানিস?”
“ঠিক জানি না। তবে উপরের নাম দেখে আর ভেতরের ছবি দুটো দেখে তো মনে হয় এটা অতিপ্রাকৃতিক কোনো বিষয় নিয়ে লেখা। মানে ওই ভূত প্রেত আর কী। তোমার কী মনে হয় রক্তিমদা।”
“কিছুটা ঠিক। কিন্তু পুরোপুরি না। তোর পাঠানো ওই ছবিগুলো দেখে বইটার যেটুকু আমি পড়তে পেরেছি তাতে এটাই মনে হয়েছে এটাতে মৃত্যুর পরও মানব আত্মাকে বশে এনে মৃতের দেহের অংশকে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তার প্রোসেস লেখা আছে।”
বাইরে সন্ধ্যের পর থেকেই একনাগাড়ে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। এই অসময়ে বৃষ্টির জন্যই হয়ত আজ ঠান্ডাটা বড্ড বেশি। তার উপর লোড শেডিং। সামনে রাখা সাদাটে ইমার্জেন্সী লাইটের আলোতে ঘরটা আরো ছোট হয়ে এসেছে ওদের দুজনকে কেন্দ্র করেই। তার বাইরে টেবিল, অগোছালো বিছানা আর বিছানার উপর রাখা বইয়ের স্তূপ গাঢ় অন্ধকারে হারিয়ে গেছে।
সায়নকে চুপ করে থাকতে দেখে রক্তিম আবার বলে, “কী বুঝলি না তো? আচ্ছা ধর এখন কী করা হয়; মৃত্যুর পর চক্ষুদান, বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গ দান করা হয়; তাই তো? মানে যাকে বলে মরণোত্তর দেহের অঙ্গ দান। তার জন্য কী করা হয়? মৃত্যুর আগেই দাতার কনসেন্ট লাগে, তাই তো? কিন্তু ধর দাতা মৃত্যুর আগে এরকম কোনো কনসেন্ট দেয় নি, অথচ তোর ওই ব্যাক্তির পার্টিকুলার কোনো অঙ্গ লাগবেই। তখন তুই কী করবি?"
“সেক্ষেত্রে মৃতের পরিবার অনুমতি দেবে।”
“আর মৃতের পরিবার যদি না থাকে বা তারা যদি অনুমতি না দেয়; সেক্ষেত্রে?”
সায়ন আবার চুপ করে যায়।
“তখন একটা উপায়ই বাকি থাকে, তা হল মৃতের আত্মাকে বশীভূত করে তার থেকে জোর করে সম্মতি আদায় করা। আর সেই পদ্ধতিই এই বই এ বলা আছে।” রক্তিমের দৃষ্টি সায়নের মুখের উপর স্থির। “আরেকটা ব্যাপার; তোর ধারনা ঠিক। বইটা চামড়া দিয়েই বাঁধানো। আর আমি যদি খুব ভুল না হই, তাহলে...।” রক্তিম এবার সামনের টেবিলে রাখা বইটা হাতে তুলে নেয়, “তাহলে এই বইটা মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো।”
বাইরে সশব্দে বাজ পড়ল। তার তীব্র নীলাভ সাদা আলোয় ঝলসে গেলো চারিদিক। সায়ন এবার যেন শিউরে ওঠে। একটা হিমশীতল চোরা স্রোত দ্রুত নেমে যায় তার শিরদাঁড়া বেয়ে।
“কী বলছ কী? মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো? এ কী সম্ভব?” সায়নের গলায় যেন মৃদু কম্পন।
“সম্ভব না হওয়ার কি আছে? আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বের বিভিন্ন লাইব্রেরি থেকে ৪৭টি বই পাওয়া গিয়েছে, আর দাবি করা হয়েছে যে ওগুলো নাকি মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো। এদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৩২টি বই পরীক্ষা করা হয়েছে। এই ৩২টা বইয়ের মধ্যে ১৮টা সত্যি সত্যিই মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো। বাকিগুলো অবশ্য বাঁধানো হয়েছিলো ছাগল, ভেড়া কিংবা হরিণের মতো প্রাণীদের চামড়া দিয়ে।”
“মানে... মানে... কী করে সম্ভব মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো? বইটা দেখে তো বেশ পুরানোই লাগছে। সেক্ষেত্রে এত বছর ধরে সেই চামড়া ইন্টাক্টই বা থাকল কী করে?” সায়নের গলায় বিস্ময় স্পষ্ট।
“দ্যাখ এক্সাক্ট প্রসেসটা আমিও জানি না। তবে এই প্রসেসের একটা নাম আছে ‘অ্যান্থ্রোপোডার্মিক বিবলিওপেজি’। দুটি গ্রীক শব্দ ‘বিবলিয়ন’ বা ‘বই’ আর ‘পেজিয়া’ বা ‘বাঁধাই করা’ থেকে এসেছে ‘বিবলিওপেজি’। আর সামনের ‘অ্যান্থ্রোপোডার্মিক’ এসেছে অন্য দুটো গ্রীক শব্দ ‘অ্যান্থ্রোপোস’ মানে ‘মানুষ’ এবং ‘ডার্মা’ বা ‘চামড়া’ থেকে।” রক্তিম কেটে কেটে উত্তর দেয়।
“তুমি কি শিওর যে এটা মানুষের চামড়া দিয়েই বাঁধানো?” সায়নের গলার কম্পনটা এবার আরো স্পষ্ট।
Reviews
Clear filtersThere are no reviews yet.